Magic Lanthon

               

রাশেদ রিন্টু

প্রকাশিত ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ১২:০০ মিনিট

অন্যকে জানাতে পারেন:

সবাক দিয়ে অবাক করলেন অ্যালান

রাশেদ রিন্টু

চলচ্চিত্রনির্মাতা            : অ্যালান ক্রসল্যান্ড

জন্ম                        : ১০ আগস্ট ১৮৯৪, নিউইয়র্ক

চলচ্চিত্রেঅবদান          : প্রথম সার্থক সবাক চলচ্চিত্র নির্মাণ

মৃত্যু                        :১৬ জুলাই ১৯৩৬, হলিউড, ক্যালিফোর্নিয়া


পৃথিবীর কোনো কিছুই গতির বাইরে নয়। সে হোক জীব কিংবা জড়। মাঝে মাঝে নিজেদের আপাত দৃষ্টিভঙ্গির কারণে কোনো কিছু স্থির মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সবই গতিশীল। মানুষ শুরু থেকেই প্রকৃতির এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ গতিকে ধরতে চেয়েছিলো। চেয়েছিলো গতিকে কাঠামোবদ্ধ করতে। সফল হয়েছিলো সেই গুহা যুগেই; যেখানে হাতে আঁকা গুহাচিত্রে বাইসনের চার পায়ের জায়গায় ছিলো ছয় পা। তার পর এই চিত্রের কারিগরি রূপ দিয়ে গতিকে ধরার চেষ্টা শুরু হয় ষোড়শ শতাব্দীতে ‘ক্যামেরা অবস্‌কিউরা’ উদ্ভাবনের মাধ্যমে। পরে ১৮৩৯ সালে এই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে লুইস জে এম ডেগুরে (১৭৮৭-১৮৫১; ফরাসি চিত্রশিল্পী, চিত্রগ্রাহক ও উদ্ভাবক) আবিষ্কার করেন ডেগুরোটাইপ (Daguerreotype) নামের যন্ত্র; যা সেন্সিটাইজড্‌ কপার প্লেটের উপর ইমেজকে প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হয়।

চলচ্চিত্র আবিষ্কারের তিনটি পর্যায়ের মধ্যে এই স্থিরচিত্র ছিলো প্রাথমিক বা প্রথম পর্যায়। দ্বিতীয় পর্যায় হলো— স্থিরচিত্রে নবম—দশম শতকে আরবের বিজ্ঞানী আল হাজেন আবিষ্কৃত অবিরত দৃষ্টিনন্দন তত্ত্বের প্রয়োগ। এই তত্ত্বে প্রথম উঠে আসে—কোনো কিছু দেখার পর মানুষের মস্তিষ্কে এর রেশ থাকে সেকেন্ডের ১২ ভাগের এক ভাগ সময় পর্যন্ত। আর এর ওপর ভিত্তি করেই স্থিরচিত্রকে চলমান করা সম্ভব হয়েছিলো। তৃতীয় পর্যায় হলো প্রক্ষেপণ; যা ছিলো চলচ্চিত্র আবিষ্কারের সর্বশেষ অন্তরায়। আর এই অন্তরায় দূর করে ১৮৯৫ সালে চলমান চিত্রের সার্থক প্রক্ষেপণের মাধ্যমে চলচ্চিত্র আবিষ্কারের পুরো কৃতিত্ব ঘরে তোলেন লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয়।

১৮৯৫ সালে আবিষ্কার হলেও তখন জীবনকে হুবহু চলচ্চিত্রের পর্দায় তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। কারণ এর অন্যতম প্রধান অঙ্গ—ধ্বনি বা শব্দ, তখনো অধরাই ছিলো। তবে এই অধরা বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা মানুষ চলচ্চিত্র আবিষ্কারের পর পরই বোধ করেনি। কারণ তখন পর্দায় বাস্তবের মতো চলমান ছবি দেখাটাই ছিলো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ধীরে ধীরে ধ্বনির প্রতি দর্শকের আকাঙ্ক্ষা বাড়তে থাকে। মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার চেষ্টারও যেনো কমতি ছিলো না।

১৯ শতকের শুরুতে জাপানে চলচ্চিত্রের নির্বাক যুগে বেনসি (benshi) বলে কিছু লোক কাজ করতো। এদের কাজ ছিলো অনেকটা সূত্রধরের মতো। কোনো চলচ্চিত্র শুরুর আগে তারা সেই কাহিনী দর্শকদের বর্ণনা করতো। এমনকি চলচ্চিত্র চলাকালীন ধারাবিবরণীও দিতো তারা। চলচ্চিত্রে আকাশ দেখানো হলে তারা বলতো, ‘এখন আপনারা আকাশ দেখছেন’।

তবে চলচ্চিত্রকে সবাক করার চেষ্টা বা এর প্রতি আকাঙ্ক্ষা শুধু উন্নত বা পশ্চিমা বিশ্বেই ছিলো, তা নয়। কারণ চলচ্চিত্র আবিষ্কারের পরের বছর থেকেই তা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। সারাবিশ্বের মতো আমাদের ভারতবর্ষেও এর প্রভাব লক্ষ করা যায়। ১৯০৫ সালেই নির্মাতা হীরালাল সেন বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের নেতা সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য

কলকাতার ‘মার্বেল হাউসে’ অবস্থিত এইচ বোস অ্যান্ড কোম্পানির টকিং মেশিন (বেলুনাকার রেকর্ড)-এ রেকর্ড করার পর বাজানোর মেশিনটি স্টেজে পর্দার পেছনে রেখে দেন এবং সেখান থেকে হলের পেছনদিকে দোতলায় চিত্রপ্রক্ষেপণ যন্ত্রের সঙ্গে বেল্টের সাহায্যে সংযোজিত করেন অর্থাৎ প্রক্ষেপণ যন্ত্র চালু হলেই টকিং মেশিনও চালু হয়ে যাবে স্বাভাবিক ভাবেই। এই ব্যবস্থায় ছবির চরিত্রের ঠোঁট নাড়ার সঙ্গে বক্তব্যের মিল না থাকলেও জনপ্রিয় নেতার কণ্ঠস্বর শোনার আগ্রহের কারণে এবং তথাকথিত সবাক চিত্রের আকর্ষণে ছবিটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল।

এদিকে নির্বাক যুগের চলচ্চিত্রে একটা সঙ্কট তৈরি হয়; তা হলো প্রজেক্টর মেশিনের আওয়াজ। এই আওয়াজ দূর করা, সেই সঙ্গে চলচ্চিত্রের ভিতর বিভিন্ন রসের আবেদনকে ধরার জন্যও প্রথম দিকে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের সময় মঞ্চের পিছন দিক থেকে বিভিন্ন রকমের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আবহসঙ্গীত ও সুর তৈরি করা হতো। যেমন : পর্দায় ঘোড়া চললে ঘোড়ার পায়ের শব্দ করা হতো। আবার কোনো কোনো সময় পর্দায় দুঃখ, উল্লাস, ভয় বা কৌতুক দৃশ্য দেখলেই যন্ত্রীদল নানা মুডে ঐকতান বাদন জুড়ে দিতেন।

এ রকম বিচ্ছিন্নভাবেই চলতে থাকে সবাকপিপাসু মানুষের তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টা। কিন্তু বাচ্য ও আলঙ্কারিক শিল্পগুণ থেকে এই মানুষগুলোকে আর দূরে রাখা সম্ভব হচ্ছিলো না। কারণ চলচ্চিত্র আবিষ্কারের কিছুদিন পরই অভিব্যক্তিবাদের মতো বিভিন্ন শিল্প-আন্দোলন যুক্ত হয়ে চলচ্চিত্র এমন এক জায়গায় চলে যায়, যা শুধু যান্ত্রিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ফলে চলচ্চিত্র শুধু বাইরের ঘটনাবলির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, এখানে জীবনের অন্তঃসলিলা রূপও ফুটে উঠতে থাকে। তবে ধ্বনি সংযোজনের সঙ্গে শুধু মানুষের প্রত্যাশা বা চলচ্চিত্রকে বাস্তবসম্মত করার ব্যাপারই জড়িত ছিলো না। এর পিছনে ব্যবসায়িক স্বার্থও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ রকম বহুবিধ প্রয়োজনে বিশ্বের নানা প্রান্তে নানা জন ধ্বনি সংযোজনের প্রচেষ্টা চালাতে থাকে।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯২২ সালে ইউজিন লস্ত্‌ (ফরাসি উদ্ভাবক; ১৮৫৭-১৯৩৫) সেলুলয়েড ফিল্মের কিনারায় শব্দের ছাপ তোলার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন এবং এর স্বত্বও নেন। কিন্তু তিনি ধ্বনি সংযোজন করতে পারেননি। তবে সবাক চলচ্চিত্র-নির্মাণে দুইটি শব্দ পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো—একটি সাউন্ড-অন-ফিল্ম, অন্যটি সাউন্ড-অন-ডিস্ক।

১৯১৯ সালে আমেরিকার লি ডি ফরেস্ট এই সাউন্ড-অন-ফিল্ম পদ্ধতির যন্ত্র ‘ফোনোফিল্ম’ উদ্ভাবন করেন। এই ফোনোফিল্ম ব্যবহার করে ফরেস্ট ফিল্মে সরাসরি দৃশ্যের সমান্তরালে কিছু শব্দ, সঙ্গীত ও রাজনৈতিক সংলাপ ধারণ করা হয়। পরে ফোনোফিল্মের সাহায্যে নির্মিত চলচ্চিত্র প্রথম প্রদর্শন করা হয় ১৯২৩ সালের ১৫ এপ্রিল নিউইয়র্কের দ্য রিভোলি থিয়েটারে। ওই দিন মোট ১৮টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেখানো হয়। তবে প্রথম দিকে ফোনোফিল্মের শব্দের মান ছিলো খুবই খারাপ। পরে এর মান উন্নয়নের চেষ্টা করা হলেও তা টেকেনি।

পরে ফরেস্টের সহকর্মী থিওডোর কেস (আমেরিকান পদার্থবিদ, রসায়নবিদ ও উদ্ভাবক; ১৮৮৮-১৯৪৪) আবিষ্কার করেন মুভিটোন সাউন্ড সিস্টেম; যা ফোনোফিল্মেরই উন্নত রূপ। এই মুভিটোন চলচ্চিত্রের সংলাপ ও দৃশ্যের মধ্যে সামঞ্জস্যের নিশ্চয়তা দেয়। পরে ১৯২৬ সালের জুলাইয়ে ফক্স ফিল্ম করপোরেশনের মালিক উইলিয়াম মুভিটোনের পুরো প্রক্রিয়ার স্বত্ব কেস-এর কাছ থেকে কিনে নেন। তার পর থেকেই মূলত শুরু হয় মুভিটোনের বাণিজ্যিক ব্যবহার। পরে ফক্স স্টুডিওর পক্ষ থেকে এফ ডব্লিউ মুরনাউ (জার্মান চলচ্চিত্রনির্মাতা; ১৮৮৮-১৯৩১) এই শব্দ পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রথম নির্মাণ করেন ফিচারধর্মী চলচ্চিত্র সানরাইজ (১৯২৭)। সানরাইজ-এ সবাকধর্মী উপাদানের মধ্যে ছিলো সঙ্গীত, আবহসঙ্গীত এবং কিছু অপ্রাসঙ্গিক শব্দও।

বিপরীতে, সাউন্ড-অন-ডিস্ক পদ্ধতিতে শব্দ ধারণের কাজও এগিয়ে চলছিলো। এই পদ্ধতির যন্ত্র ভিটাফোন প্রথমে উদ্ভাবন করে আমেরিকার ওয়ার্নার ব্রাদার্স কোম্পানি (১৯২৩, ক্যালিফোর্নিয়া)। তবে প্রথমে এই যন্ত্রের নাম ভিটাফোন ছিলো না। ১৯২৪—২৫ সালের দিকে যখন ওয়েস্টার্ন ইলেকট্রিক কোম্পানি (নিউইয়র্ক, ১৮৭২) এই পদ্ধতির কাঠামো দাঁড় করায় তখন এর নাম রাখা হয় ভিটাফোন। ভিটাফোনে লি ডি ফরেস্ট-এর অডিয়ন টিউবের ওপর ভিত্তি করে ইলেকট্রনিক অ্যামপ্লিফিকেশন ব্যবহার করা হয়। ফলে শ্রোতাদের শব্দ শোনার প্রতিবন্ধকতা আর রইলো না। ওয়ার্নার ব্রাদার্স কোম্পানি ভিটাফোন প্রথম বাজারে আনে ১৯২৬ সালে ৬ আগস্ট ডন জুয়ান-এর  মাধ্যমে। এই চলচ্চিত্রে শুধু সুর ও আবহসঙ্গীতের ব্যবহার করা হলেও মুখের কোনো কথা ছিলো না। ওই বছরই এই কোম্পানি দ্য বেটার ওল নামে আরো একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। একপর্যায়ে এই ভিটাফোন শব্দ পদ্ধতি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। 

তবে ভিটাফোনের সবচেয়ে বড়ো সফলতাটি আসে অ্যালান ক্রসল্যান্ডের দ্য জ্যাজ সিঙ্গার নির্মাণের মাধ্যমে। নিউইয়র্কের ওয়ার্নার থিয়েটারে ১৯২৭ সালের ৬ অক্টোবর এর প্রথম প্রদর্শনীতে বক্স অফিসের আগের সব রেকর্ড  ভেঙে ফেলে। এই চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যয় হয়েছিলো পাঁচ লক্ষ মার্কিন ডলার, আর আয় করেছিলো ৩০ লক্ষ  ডলার। এই চলচ্চিত্রে মোট দুইশো ৮১টি মৌখিক শব্দ প্রয়োগ করা হয়। এর আগে অন্য কোনো চলচ্চিত্রে এতগুলো মৌখিক শব্দের ব্যবহার লক্ষ করা যায় না। তাই দ্য জ্যাজ সিঙ্গারকে পৃথিবীর প্রথম সার্থক সবাক চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে এই চলচ্চিত্রের প্রথম প্রদর্শনীর দিন অর্থাৎ ৬ অক্টোবরকে সবাক চলচ্চিত্রের জন্মদিন হিসেবেও পালন করা হয়।

দ্য জ্যাজ সিঙ্গার-এর মাধ্যমে সবাক চলচ্চিত্রের যে যাত্রা শুরু হয় তা আর থামেনি। পরে ১৯২৮ সালে ওয়ার্নার ব্রাদার্স কোম্পানি নির্মাণ করে নিরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র লাইট অব দ্য নিউইয়র্ক। এই চলচ্চিত্রে পুরোপুরি সংলাপ ব্যবহার করা হয়। চলচ্চিত্রটি সেসময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এভাবেই ঘটে সবাকের উদয়; নির্বাকের ম্রিয়মাণতা। এবারে আমাদের আলোচনা অ্যালান ক্রসল্যান্ড ও তার দ্য জ্যাজ সিঙ্গার নিয়ে।

অ্যালান ক্রসল্যান্ড প্রসঙ্গ

অ্যালান ক্রসল্যান্ড। জন্ম ১৮৯৪ সালের ১০ আগস্ট আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটির উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারে। জন্মের পর পরই সপরিবারে চলে আসেন নিউ জার্সির ইস্ট অরেঞ্জে; সেখানেই বেড়ে ওঠা। পরে পারিবারিক সচ্ছলতা অ্যালানকে পড়াশোনার জন্য টেনে নিয়ে যায় ইংল্যান্ডে; এখানেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। একপর্যায়ে তিনি ভর্তি হন ডার্টমাউথ কলেজে (ইংল্যান্ডের নিউ হ্যাম্পশায়ার-এ অবস্থিত কলেজটি ১৭৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত)। এখানে পড়াশোনা করার সময় অ্যালান-এর সাংবাদিকতার প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়। তিনি স্নাতক সম্পন্ন না করেই দেশে ফিরে ‘নিউইয়র্ক গ্লোব’ (১৯০৪-১৯২৩, নিউইয়র্ক) নামে একটি ম্যাগাজিনে চাকরি নেন। এই ম্যাগাজিনের চলচ্চিত্র বিষয়ক বিভাগে তার নানাধরনের অনুচ্ছেদ ও ছোটোগল্প প্রকাশ হয়।

ম্যাগাজিনে কাজ করার একপর্যায়ে অ্যালান থিয়েটারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। আর কোনো কিছুর প্রতি মন ছুটে গেলে বা আকৃষ্ট হলে সেটাকেই তিনি সবসময় প্রাধান্য দিতেন। তাই ১৯০৯ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে প্রদর্শনীর ব্যবসার মাধ্যমে মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হন অ্যালান। পরে তিনি মঞ্চে অভিনয়ও শুরু করেন। শেক্সপিয়ারের নাটকে কাজ করা অ্যানি রাসেল-এর সঙ্গেও তিনি মঞ্চে অভিনয় করেছেন। বেশ কিছুদিন অভিনয় করার পর অ্যালান মঞ্চ-ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।

ম্যাগাজিনে লেখালেখি এবং মঞ্চ নাটকে কাজ করার সময়ই অ্যালানের চলচ্চিত্রের প্রতি একধরনের ভালোবাসা জন্মে। এই ভালোবাসা থেকেই অ্যালান ১৯১২ সালে নিউইয়র্কে এডিসন স্টুডিওতে যোগ দেন। এখানে প্রথম দুই বছর তিনি চলচ্চিত্র-নির্মাণ প্রশিক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চ নাটকেও বিভিন্ন ধরনের কাজ করতেন। এর ফলে শুরুতে স্টুডিওতে কাজ করে খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না তিনি। তবে তিনি হাল ছাড়েননি। একপর্যায়ে তিনি মঞ্চসহ অন্য সব কাজের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে চলচ্চিত্রে গভীরভাবে মনোনিবেশ করেন। ফলস্বরূপ ১৯১৪ সালের দিকে অ্যালান স্বলপদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রনির্মাতা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে অ্যালানের সঙ্গে চলচ্চিত্রের ক্ষণিকের বিচ্ছেদ ঘটে। এ সময় তিনি আর্মি ফটো সার্ভিসে কাজ শুরু করেন। কিন্তু তরুণ এই নির্মাতার চলচ্চিত্র ব্যতীত অন্য কোনো কাজে মন ছিলো না। মানববিধ্বংসী যুদ্ধ তাকে আরো অস্থির করে। তিনি আবার চলচ্চিত্র-নির্মাণে হাত দেন। ১৯১৭ সালেই অ্যালান নির্মাণ করেন তার প্রথম কাহিনিচিত্র কিডন্যাপকিডন্যাপ নির্মাণের পর থেকে তিনি বিভিন্ন স্টুডিওতে পুরোদমে কাজ করতে থাকেন। একই বছর অ্যালান নির্মাণ করেন—দ্য লাইট ইন ডার্কনেস, ক্রিস অ্যান্ড হিজ ওয়ান্ডারফুল ল্যাম্প, নাইট্‌স অব দ্য স্কোয়ার টেবিল, দ্য লিটল চেভারিয়ার, দ্য স্টোরি দ্যাট দ্য কেগ টোল্ড মি, দ্য অ্যাপল-ট্রি গার্ল, ফ্রেন্ডসরোমান্স অ্যান্ড লিও।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অ্যালানের এই সাহসী কর্মকাণ্ড ও নির্মাণ দক্ষতা বেশ সুনাম অর্জন করে। ওই সময়ের বিখ্যাত নির্মাতা ও অভিনেতা এরিক ভন স্ট্রোহেইম (জন্মসূত্রে অস্ট্রিয়ান; ১৮৮৫—১৯৫৭) যে কয়েকজন নির্মাতার প্রশংসা করেছিলেন তার মধ্যে অ্যালান অন্যতম। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অ্যালান এ সময় বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।  ১৯১৭ সালে অ্যালানের বিয়ে হয় জুনিটা ফ্লেচার-এর (Juanita Fletcher) সঙ্গে। পরের বছর তিনি দ্য আনবিলিভার নামে ৮৫ মিনিটের একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। পরে ১৯২০ সালের শেষের দিকে মুক্তি পায় তার দ্য ফ্ল্যাপার।

তবে জুনিটা ফ্লেচারের সঙ্গে অ্যালানের বৈবাহিক সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। মাত্র চার বছরের মাথায় একমাত্র সন্তানকে (অ্যালান ক্রসল্যান্ড জুনিয়র) রেখে ১৯২১ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। তার এই সম্পর্ক ভাঙার প্রভাব ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে কর্মজীবনেও পড়ে। তাই ওই সময়টায় তাকে খুব একটা কাজকর্মে সক্রিয় থাকতে দেখা যায়নি। এর প্রভাব কাটতে থাকলে ১৯২৩ সালে তিনি ‘গোল্ডউইন-কসমোপলিটন’ (Goldwyn-Cosmopolitan)  নামে আমেরিকার একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। এই সংস্থার অধীনে তিনি নির্মাণ করেন আন্ডার দ্য রেড রোব (১৯২৩)। চলচ্চিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়; যা অ্যালানকে হলিউডের সেরা নির্মাতাদের একজন করে তোলে। শুধু তা-ই নয়, ওই সময় ঐতিহাসিক রাজকীয় নাটক নির্মাণের জন্য তাকেই উপযুক্ত পরিচালক হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিলো। এই জনপ্রিয়তা নিয়েই অ্যালান পরের বছর নির্মাণ করেন থ্রি উইকস, মিয়ামি, আনগার্ডেড ওম্যানসিনারস ইন হেভেন।

এ পর্যায়ে অ্যালানের পরিচয় হয় নির্বাক চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী এলাইন হ্যামারস্টাইন-এর (Elaine Hammerstein) সঙ্গে। এরপর ১৯২৫ সালে তাদের বিয়ে হয়। এ বছরই তিনি কাজ শুরু করেন জেসি এল লাস্কি’র চলচ্চিত্র-নির্মাণ কোম্পানি ‘ফেমাস-প্লেয়ার্স লাস্কি’তে (বর্তমানের প্যারামাউন্ট পিকচারস্‌)। অ্যালানের চলচ্চিত্র-জ্ঞানে মুগ্ধ হয়ে ‘ওয়ার্নার ব্রাদার্স কোম্পানি’ তাদের হলিউড স্টুডিওতে কাজ করার জন্য তাকে প্রস্তাব দেয়। আর অ্যালানও তা সাদরে গ্রহণ করেন। এখানে তিনি প্রথমে বেশ কয়েকটি নির্বাক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। পরে ১৯২৬ সালে নির্মাণ করেন ডন জুয়ান এই চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম সুর ও আবহসঙ্গীত ব্যবহার করেন। এই সুর ও আবহসঙ্গীত ব্যবহারের সফলতা তাকে নিয়ে যায় এক অনন্য উচ্চতায়।

ডন জুয়ান-এর সফলতা অ্যালানকে সবাক চলচ্চিত্র নিয়ে আগ্রহী করে তোলে। তবে সুর ও আবহসঙ্গীতের ব্যবহারে চলচ্চিত্র উৎপাদন ব্যয়ও ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। কিন্তু এসবের কিছুই থামাতে পারেনি অ্যালানকে। তিনি চলচ্চিত্রে কথা সংযোজনে আত্মনিবেদন করেন। সফলতা আসে পরের বছরই অর্থাৎ ১৯২৭ সালে দ্য জ্যাজ সিঙ্গার-এর মধ্য দিয়ে। এটিই ছিলো তার জীবনের সেরা নির্মাণ। এর মাধ্যমে যাত্রা করে সবাক চলচ্চিত্র যুগ। এ বছর নির্মিত তার অন্যান্য চলচ্চিত্র হলো হোয়েন অ্যা ম্যান লাভস, দ্য বিলাভড রোগি, ওল্ড সান ফ্রান্সিসকো।

দ্য জ্যাজ সিঙ্গার নির্মাণের পর অ্যালান চলচ্চিত্রে ধ্বনি সংযোজনে অনেক দক্ষ পরিচালক হয়ে ওঠেন। ১৯২৮ সালে তিনি নির্মাণ করেন আরেক সবাক চলচ্চিত্র গ্লোরিয়াস বিটসি। এই চলচ্চিত্রটিও দর্শকের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পায়। এরপর অ্যালান ১৯২৯ সালে নির্মাণ করেন অন উইথ দ্য শো। এটি নির্মাণের পর নির্মাতাদের কাছে স্পষ্ট হয়, চলচ্চিত্রের সফলতা শুধু ধ্বনির ওপরই নির্ভর করে না, নির্মাণ দক্ষতাও জরুরি। পরে ১৯৩০ সালে অ্যালান নির্মাণ করেন জেনারেল ক্র্যাক, দ্য ফুরিজ, সঙ অব দ্য ফ্লেইম, বিগ বয়।

এই ১৯৩০ সালে আবারও অ্যালানের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। ওই বছরই আমেরিকান অভিনেত্রী নাটালি মুরহেড-এর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এই সম্পর্কও ভেঙে যায় ১৯৩৫ সালে। বার বার বিয়ে ভেঙে গেলেও চলচ্চিত্রের সঙ্গে অ্যালানের সম্পর্ক কখনো ভাঙেনি। ধ্বনি সংযোজনের ত্রুটিপূর্ণ যান্ত্রিকতা সত্ত্বেও অ্যালান নির্মাণ করেন একের পর এক চলচ্চিত্র।

অ্যালান নির্মিত অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে-দ্য হোয়ার্লপুল (১৯১৮), দ্য কান্ট্রি কাজিন (১৯১৯), গ্রেটার দ্যান ফেম (১৯২০), ইয়ুথফুল ফোলি (১৯২০), দ্য পয়েন্ট অব ভিউ (১৯২০), ব্রডওয়ে অ্যান্ড হোম (১৯২০), জেনি (১৯২০), এভরিবডি’স সুইটহার্ট (১৯২০), দ্য ফেইস ইন দ্য ফগ (১৯২২), অ্যানিমি’স অব ওম্যান (১৯২৩), কন্ট্রাব্যান্ড (১৯২৫), বব্‌ড হেয়ার (১৯২৫), কম্প্রোমাইজ (১৯২৫), জেনারেল ক্রাক (১৯৩০), সঙ অব দ্য ফ্লেম (১৯৩০), উইক এন্ডস্‌ অনলি (১৯৩২), হ্যালো, সিস্টার! (১৯৩৩), দ্য পার্সোনালিটি কিড (১৯৩৪), দ্য কেস অব দ্য হোউলিং ডগ (১৯৩৪) ও দ্য গ্রেট ইম্পারসোনেশন (১৯৩৫)।

১৯৩৬ সালের ১০ জুলাই সকালে লস অ্যাঞ্জেলেসের সানসেট বুলেভার্দে (Boulevard) গাড়ি চালানোর সময় রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ে সেটি। এই সড়ক দুর্ঘটনায় তার শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় ও মাথার খুলি ফেটে যায়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চার দিনের মাথায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন অ্যালান। পরবর্তী সময়ে ভুল চিকিৎসার কারণে অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে, ১৬ জুলাই অ্যালান ইহলোক ত্যাগ করেন। তার অসমাপ্ত চলচ্চিত্র দ্য কেস অব দ্য ব্ল্যাক ক্যাট সমাপ্ত করেন আমেরিকান আরেক নির্মাতা উইলিয়াম সি ম্যাকগান (১৮৯৩—১৯৭৭)।

চলচ্চিত্র : দ্য জ্যাজ সিঙ্গার

ডেরিল এফ জানুক-এর প্রযোজনা ও অ্যালান ক্রসল্যান্ডের পরিচালনায় দ্য জ্যাজ সিঙ্গার ইতিহাসের এক নতুন সৃষ্টি। বিখ্যাত এই চলচ্চিত্রটির পটভূমি ১৯২১ সালে রচিত স্যামসন রাফায়েলসন-এর ছোটোগল্প ‘দ্য ডে অ্যাটোনিমেন্ট’। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের একনিষ্ঠ ধর্মযাজক রবিনইচ। তিনি চান, বংশের পাঁচ প্রজন্মের ঐতিহ্য ধরে রেখে ছেলেও তার মতো ক্যান্টর (গির্জার প্রধান গায়ক) হবে। কিন্তু ছেলে জ্যাকি রবিনইচ বাবার ইচ্ছার প্রতি একটুও আগ্রহ দেখাননি। তিনি হতে চান জ্যাজ গায়ক। কিন্তু তা কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না রবিনইচ। অন্তর্দ্বন্দ্বে পড়েন জ্যাকি। কোন্‌টাকে বেছে নিবেন—বাবার ইচ্ছা, নাকি জ্যাজ গান?

প্রথম দৃশ্যে জ্যাকিকে একটি সেলুনে (পানীয় পান করার স্থান) গান গাইতে দেখা যায়। মইসা জুডলেসন (ধর্মযাজক রবিনইচ-এর সহযোগী) জ্যাকিকে সেলুনে গান গাইতে দেখে দ্রুত ক্যান্টরকে জানান। তখনই ক্যান্টর সেই সেলুনে গিয়ে জ্যাকিকে ধরে টেনেহিঁচড়ে বাসায় নিয়ে আসেন। একপর্যায়ে জ্যাকি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।

এই ঘটনার বেশ কয়েক বছর পর জ্যাকি রবিনইচ বিভিন্ন নাইট ক্লাবে গান গেয়ে জ্যাক রবিন নামে খ্যাতি অর্জন করেন। কফি হাউজে জ্যাক রবিনের গান শুনে মুগ্ধ হন নৃত্যশিল্পী মেরি ডেলে। সেখানেই তাদের পরিচয়। একপর্যায়ে এই জুটি (জ্যাক ও মেরি) সুযোগ পান আমেরিকার ব্রডওয়েতে অনুষ্ঠান করার। এরপর ব্রডওয়েতে জ্যাকের সঙ্গে নতুন করে পরিচয় ঘটে মইসা জুডলেসনের। জ্যাক আবার ফিরে যান নিজ বাড়িতে; গান শোনান মাকে। কিন্তু হঠাৎ-ই আগমন ঘটে তার বাবার; শুরু হয় পুরনো ঝগড়া। জ্যাক বাধ্য হন বাড়ি ছাড়তে।

ঘটনার একপর্যায়ে তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। জীবনমৃত্যুর এই সন্ধিক্ষণে তিনি তার ছেলেকে ক্যান্টর হিসেবে স্থলাভিষিক্ত করতে চান। এমন সময় ব্রডওয়েতে অনুশীলনের সময় জ্যাক জানতে পারেন বাবার অসুস্থতার খবর। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি বাড়ি ফেরেন না। এমনকি শেষবারের মতো বাবাকে দেখা ও তার ইচ্ছা পূরণের জন্য মায়ের অনুরোধও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।

তার পরও অনুশীলন শেষে জ্যাক তার বাবাকে দেখতে আসেন। সবাই তাকে গির্জায় গান গাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। জ্যাক আবার দ্বিধায় পড়েন; কোন্‌টাকে বেছে নেবেন—এতদিন ধরে নিজের ভিতরে পুষে রাখা স্বপ্ন নাকি বাবার ইচ্ছা? শেষ দৃশ্যে অবশ্য জ্যাককে ক্যান্টর হিসেবে গান গাইতেই দেখা যায়।

আপাত সরল কাহিনি নিয়ে নির্মিত দ্য জ্যাজ সিঙ্গার ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সবাক চলচ্চিত্রের অস্তিত্ব পৃথিবীতে যতোদিন থাকবে, ততোদিন থাকবে দ্য জ্যাজ সিঙ্গার।

 

লেখক : রাশেদ রিন্টু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

rashed.rin2@gmail.com

তথ্যসূত্র

১. হায়দার, কাজী মামুন; ‘পটের গান : চলচ্চিত্র উদ্ভব ইতিহাসের নিম্নবর্গীয় পাঠ’; ম্যাজিক লণ্ঠন; সম্পাদনা : কাজী মামুন হায়দার; বর্ষ ৩, সংখ্যা ১, জুলাই ২০১৩, পৃ. ৭১, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী।

২. ঘোষ, জয়ন্তকুমার (২০০৮ : ৬১); ব্রাত্যজনের বায়োস্কোপ; দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা।

৩. তবে একটি গ্রন্থে ডন জুয়ান-এর নির্মাতা হিসেবে জন বেরিমোর-এর নাম পাওয়া যায়। বিস্তারিত জানতে দেখতে পারেন : রহমান, মুম (২০১১ : ১৬); বিশ্বসেরা আরো ৫০ চলচ্চিত্র; ভাষাচিত্র, ঢাকা।

 

পাঠ সহায়িকা

http://en.wikipedia.org/wiki/Alan_Crosland

http://www.imdb.com/name/nm0189076/

http://www.imdb.com/name/nm0189076/bio

http://en.wikipedia.org/wiki/Alan_Crosland

http://ganashakti.com/bengali/features_details.php?featuresid=961

 

বি. দ্র. এ প্রবন্ধটি ২০১৫ সালের জানুয়ারির ম্যাজিক লণ্ঠনের অষ্টম সংখ্যায় প্রথম প্রকাশ করা হয়।


এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন